ঠাকুরগাঁওএর আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। ‘নিশ্চিন্তপুর’-নামটি উচ্চারিত হলেই চোখেরসামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনো গ্রাম বা জনপদের ছবি। কিংবামনে পড়ে যায় বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাসের ‘নিশ্চিন্দিপুর’ গ্রামেরকথা। কিন্তু কখনো মনে পড়েনা উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের কথা। কেননা অনেকদিনআগেই চাপা পড়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই নিশ্চিন্তপুর নামটি। কয়েকজন বিত্তশালীমানুষের খোয়ালী ইচ্ছাকে পূরণ করতে সাধারণের প্রিয় জনপদ নিশ্চিন্তপুরকেপাল্টে করা হয় ঠাকুরগাঁও। আর এ ইতিহাস অজানা রয়েছে বলে নিশ্চিন্তপুর শব্দটিউচ্চারিত হলে কখনো ঠাকুরগাঁওয়ের কথা মনে হয় না। তবে ইতিহাস সচেতন মানুষআজো আবেগ শিহরিত হৃদয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সঙ্গে নিশ্চিন্তপুরের কথা মনে করেন।ঠাকুরগাঁওয়েরনাম যে নিশ্চিন্তপুর ছিল তার তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এতদিন আমাদেরহাতের কাছে ছিল না। জনশ্রুতি ও মৌজার নাম নিশ্চিন্তপুর হওয়ায় অনুমান করাহতো ঠাকুরগাঁও সম্ভবত এক সময়ে নিশ্চিন্তপুর নামে পরিচিত ছিল। কিন্তুসম্প্রতি একটি মানচিত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় এটা সন্দেহাতীতভাবেপ্রমানিত হয়েছে যে ঠাকুরগাঁওয়ের আদি নাম ছিল ‘নিশ্চিন্তপুর’। ১৭শ শতাব্দীরকোচবিহারের মানচিত্রে সংলগ্ন এলাকার যে অবস্থান দেখানো হয়েছে তাতেঠাকুরগাঁও ও নিশ্চিন্তপুর নামে দু’টি আলাদা জায়গা চিহ্নিত রয়েছে। টাঙ্গননদীর পূর্ব প্রান্তে দেখানো হয়েছে নিশ্চিন্তপুর এবং এরই কিছুটাউত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গন নদীর পশ্চিম প্রান্তে দেখানো হয়েছে ঠাকুরগাঁও। এ থেকেপরিষ্কার বোঝা যায় যে টাঙ্গন নদীর পূর্ব প্রান্তের নিশ্চিন্তপুরকেইপরবর্তীতে ঠাকুরগাঁও নাম দিয়ে সদরের নামকরণ করা হয়। আর এর মাধ্যমেইনিশ্চিন্তপুর রূপান্তরিত হয় ঠাকুরগাঁওয়ে। প্রথমে সমগ্র মহকুমা পরিচিত হয়ঠাকুরগাঁও নামে এবং পরে এরই ধারাবাহিকতায় জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পরিচিতি। ঠাকুরগাঁওয়েরনামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে আর যা পাওয়া গেছে তাহলো, বর্তমানে যেটি জেলা সদরঅর্থাৎ যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরেআকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুই ভাইবসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে তারা সেই এলাকায় খুব পরিচিতছিলেন। সেখানকার লোকজন সেই চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয়লোকজন এই জায়গাকে ঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরগাঁও বলতে শুরু করে। চক্রবর্তীবাবুরা এখানে একটি থানা স্থাপনের প্রয়োজন অনুভব করেন। তাদের অনুরোধেজলপাইগুড়ির জমিদার সেখানে একটি থানা স্থাপনের জন্য বৃটিশ সরকারকে রাজিকরান। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে এখানে একটি থানা স্থাপিত হয়। আর তারনাম দেওয়া হয় ঠাকুরগাঁও থানা। পরবর্তীতে নানা কারণে টাঙ্গন নদীর পূর্বতীরেনিশ্চিন্তপুরে ঠাকুরগাঁও থানা স্থানান্তরিত হয়। আর এই থানাকে কেন্দ্র করে১০টি থানা নিয়ে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুরগাঁও মহকুমা গঠিত হয়। বর্তমানপঞ্চগড় জেলার ৫টি থানাই তখন ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্গত ছিল। ১৯৮৪খ্রিস্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি ৫টি থানা নিয়ে এই ঠাকুরগাঁওয়ের নামবাংলাদেশের মানচিত্রে চিহ্নিত হয় জেলারূপে। জেলারূপে নতুন হলেও জনপদ হিসেবেঠাকুরগাঁওয়ের রয়েছে এক সুপ্রাচীন ইতিহাস। |
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস